স্টাফ রিপোর্টার,
বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই–অগাস্টে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এবং নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. ইউনুস interim সরকার গঠন হলেও কিংবা এই সরকারের মেয়াদ এক বছর অতিক্রান্ত হলেও এখনও পর্যন্ত কোনো দেশের সাথে নতুন স্বাক্ষরিত সামরিক চুক্তি (defence MoU বা সরাসরি armament procurement চুক্তি) গৃহীত হয়নি।
সম্প্রতি ভারত পাকিস্তান সীমান্ত যুদ্ধের পর চীনের ১৬টি জে টেন সি আধুনিক মাল্টিরোল ফাইটার জেট এবং এয়ার টু এয়ার ও এয়ার টু সারফেস পিএল ফিফটিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা কেনার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল এবং এ সম্পর্কিত আলোচনাও বিভিন্ন মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন পরেও এর কোন বাস্তব চুক্তির সম্ভাবনা এখনো চোখে পড়ছে না। কোন অদৃশ্য ইশারায় তা হচ্ছে না সেটা এ জাতি কম বেশি এখন বুঝতে পারে।
দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরেই বাংলাদেশ তার নিজের স্বাধীন আকাশ, জল ও স্থল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় অন্য আর দশটা অর্থনৈতিক সমান সক্ষমতার দেশের চেয়ে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। জুলাই বিপ্লবের পর সকলের প্রত্যাশা ছিল হয়তো এ অবস্থান থেকে বাংলাদেশ উত্তরণ ঘটাবে। নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ডক্টর ইউনুসূসের নেতৃত্বে তার হাত ধরে বাংলাদেশ আকাশে মেলবে নিরাপত্তার স্বপ্নের ডানা। কিন্তু মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের পর বিষয়টি যেন আরো জোরেশোরেই জনতার মনে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে যে, প্রফেসর ডঃ ইউনুস সরকারের ইন্টেরিম গভমেন্ট গঠনের এক বছর পেরিয়ে গেলেও এবং তিনি ও তার নেতৃত্বে কয়েকটি দেশে সফর এবং বিভিন্ন সামরিক চুক্তির বিষয়ে আলোচনা হলেও এখন পর্যন্ত তার কোন ফলপ্রসু দৃশ্যমান চুক্তির ঘটনা চোখে পড়েনি। বরং সবগুলো আলোচনায় ঝুলে আছে।
দেশের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সামাল দেওয়া এবং নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে অধিক মনোযোগী হওয়ায় বাকি সময়ের মধ্যে এসব চুক্তি করতে পারবেন কি ডঃ ইউনুস সরকার? যদি এক বছরেও এসব চুক্তি করা সক্ষমতা অর্জন এই সরকারের না হয় তাহলে নির্বাচন পূর্ববর্তী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নিতে এসব চুক্তি কি করতে পারবে এই সরকার? নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা করা হয়েছে এবং তার জন্য তার পূর্বে আরো পাঁচ মাস আগে থেকেই সেই সম্পর্কে সরকার এবং সরকারি বিভিন্ন সংস্থা তার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করবে। হাতে সময় মাত্র এক মাস। এর মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনার চুক্তির বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে মর্মে খবরে প্রকাশ। সেটাও ডিসেম্বরের কথা বলা হয়েছে। আদৌ কি করতে পারবে এই সরকার?
প্রশ্ন হল, প্রতিবেশী বন্ধুর বেশে এ দেশকে নিয়ন্ত্রণ করা আধিপত্যবাদী রাষ্ট্র ভারতের প্রচ্ছন্ন ইন্ধনে দীর্ঘ ৫৪ বছরে বাংলাদেশ তার আকাশ জল ও স্থল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় অঘোষিতভাবে সক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। সেই দেশ কিভাবে আরেকটি নির্বাচিত সরকার এলে এই সক্ষমতা অর্জন করতে পারবে প্রশ্ন এসে যায়। সে ক্ষেত্রে সকল দল-মত সমর্থিত ও নির্বিশেষে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের চেতনার এই সরকার যদি এই চুক্তিগুলো এ সরকারের সময়েই করতে না পারে তাহলে হয়তো আদৌ বাংলাদেশ প্রকৃত স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের স্বপ্নের ডানা আকাশে আর কখনোই মেলতে পারবেনা। ব্যর্থ হবে জুলাই অভ্যুত্থানের স্বপ্ন।
🔹 ইতিবাচক সহযোগিতা ও চুক্তির সম্ভাবনা
✅ বাংলাদেশ–পাকিস্তান
Lt. Gen S M Kamr‑ul‑Hassan এর পাকিস্তান সফরে দুই দেশের সামরিক নেতৃত্বের সাথে উচ্চস্তরের আলোচনা হয়েছে, যেখানে JF‑17 যুদ্ধবিমানের সম্ভাব্য আমদানি, সামরিক ও গোয়েন্দা সহযোগিতা নিয়ে আলাপ হয়েছে ।
জিও-রাজনৈতিক শঙ্কা থাকা সত্ত্বেও, পাকিস্তানের ISI প্রধানের ঢাকা সফর হওয়ায় intel মার্কস শেয়ারিং অনুমান (যা এখনও নিশ্চিত নয়)—এটি চুক্তি নয়, তবে এক ধরনের সম্ভাবনাময় বতর্মান পরিস্থিতি ।
🇹🇷 বাংলাদেশ–তুরস্ক
৭ জুলাই ২০২৫ তারিখে Türkiye Defence Industries Secretariat এর প্রধান Haluk Görgün ও বাংলাদেশের সামরিক ও interim প্রশাসন বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। এ সভায় সামরিক প্রযুক্তি স্থানান্তর ও ডিফেন্স শিল্প উন্নয়নে সহযোগিতা নির্ধারণে রূপরেখা আঁকা হয়েছে ।
ব্যাপক আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে Turkish firms দ্বারা ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন স্থাপনের পরিকল্পনা উঠেছে; Roketsan ও MKE সহযোগিতার কাঠামো আলোচনায় এসেছে ।
🇸🇦 বাংলাদেশ–সৌদি আরব
৬ মে, ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশের সাথে Saudi Arabia যৌথ অনুশীলন ও arms procurement সহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রথমবারের মতো Defense Cooperation Joint Committee (প্রটোকল সহ) অনুষ্ঠিত হয় ।
🇯🇵 বাংলাদেশ–জাপান
জাপান interim সরকারের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেছে এবং পাঁচটি coastal patrol vessel প্রদান করতে চায়, air pollution monitoring ইকুইপমেন্ট ইত্যাদি সরবরাহে চুক্তির প্রস্তাব এসেছে ।
🇨🇳 বাংলাদেশ–চীন
interim সরকারের আগেই ছোট ও মাঝারি অস্ত্র তৈরির প্রযুক্তি Bangladesh Ordnance Factory ও Machine Tools Factory তে চীন থেকে স্থানান্তর করা হয়েছে; কৌশলগত যে কেউ চুক্তি না হলেও long‑term defence-tech transfer চলেছে ।
উপরে উল্লেখিত দেশগুলোর (পাকিস্তান, তুর্কি, সৌদি, জাপান, চীন) সাথে সম্ভাব্য চুক্তির ভিত্তি তৈরি হলেও, এখনো কোনো নতুন G2G MoU বা সরাসরি ব্রোক করা বাণিজ্যিক চুক্তি আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষরিত হয়নি।
ড. ইউনুস সরকার এখনও ২০২৫-২০২৬ সালের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে ব্যস্ত, তাই চুক্তি বাস্তবায়নে কিছুটা অপেক্ষার সম্ভবনা রয়েছে।
আকাশ-সমুদ্র সীমানায় নিরাপত্তা বাড়াতে এবং ভূ–রাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে এই দেশগুলোর সাথে বিষয়গুলো এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।
পাকিস্তান ❌ না ✔ আলোচনা রয়েছে—JF‑17 যুদ্ধবিমান সংক্রান্ত ক্ষেত্রে চুক্তির আগ্রহ
তুর্কি ❌ না ✔ প্রযুক্তি স্থানান্তর ও শিল্প উদ্যোগের প্রস্তাবনা
সৌদি ❌ না ✔ যৌথ কমিটি, বহুল সম্ভাবনা
জাপান ❌ না ✔ প্যাট্রোল জাহাজ ও মনিটরিং ইকুইপমেন্ট প্রস্তাবনা
চীন ❌ না ✔ অস্ত্র প্রযুক্তি অক্টোবর ২০২৪–২০২৫ থেকে স্থানান্তর
🧠 ভবিষ্যতে কী হতে পারে?
Türkiye ও Saudi র সাথে সম্ভবত MoU বা Framework Agreements তৈরি হতে পারে।
চীন ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে, সরাসরি অস্ত্র চুক্তি না হলেও def‑tech transfer বা procurement deals আনুষ্ঠানিকতা পেতে পারে।
জাপান থেকে সরাসরি সামরিক সরঞ্জাম আসে, যদিও তা ডিফেন্স সামগ্রী না হলেও চলমান সহযোগিতার একটি অংশ।
ইউনুস-সরকার এখনো কোনো নতুন বিদেশি সামরিক চুক্তি চুক্তিবদ্ধ করেনি, কিন্তু বিভিন্ন দেশ— Pakistan, Türkiye, Saudi Arabia, Japan এবং China—এর সাথে উন্নত পর্বে আলোচনাসহ সম্ভাব্য চুক্তির রূপরেখা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
চুক্তি নিশ্চিত হলে, সেটা মূলত defence cooperation MoU, technology-transfer agreements, বা equipment supply proposals—যা সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত হতে পারে।
জুলাই অভ্যুত্থানে প্রায় দুই হাজার ছাত্র জনতার জীবন দান ও প্রায় অর্ধ লক্ষ ছাত্র জনতার পঙ্গুত্ববরণ কে তবে অর্থহীন হয়ে যাবে? জুলাই অভ্যুত্থানকে শুধু ফ্যাসিবাদ তাড়ানোর অভ্যুত্থান ছিল নাকি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অখন্ডতা রক্ষার স্বপ্ন ছিল ছাত্র জনতার মধ্যে? যেখানে স্লোগান ছিল দিল্লি না ঢাকা- ঢাকা,ঢাকা। কেন ছিল এই স্লোগান? সেটির মর্ম কি এই সরকার অনুধাবন করতে পারবেন শেষ পর্যন্ত? নাকি আবারও নির্বাচনের মাধ্যমে নিঃশ্বেষ হয়ে যাবে সেই নতুন বোতলে পুরনো মদের মতই দেশের স্বাধীনতা,, সার্বভৌমত্ব, অখন্ডতার জনতার স্বপ্ন অন্য কারো অদৃশ্য ইশারায়? -এমন প্রশ্ন করা মনে হয় অমূলক হবে না।
লেখকঃ এম এ সাইদ
শিক্ষক,সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ মেছবাহুল আলম , বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: +৮৮ ০১৩০২১৭৫০৫৭
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত