জেলা প্রতিনিধি,
উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামে আসছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) তিনি এক সরকারি সফরে কুড়িগ্রামে পৌঁছাবেন বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে স্বাক্ষরিত এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। সফরকালে তিনি নদীভাঙ্গন কবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করবেন এবং চলমান কার্যক্রমের অগ্রগতি মূল্যায়ন করবেন।
সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান কুড়িগ্রাম পৌঁছাবেন। এরপর রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ও খিতাবখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন তিস্তা নদীর তীরবর্তী চলমান প্রতিরোধমূলক প্রকল্প পরিদর্শন করবেন। সকাল ১১টায় তিনি তিস্তার বামতীর দড়িয়াপুর এলাকা ঘুরে দেখবেন এবং পরবর্তীতে দুপুর ১২টায় রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলার পাজরভাঙ্গা রেলসেতুর কাছে তিস্তা নদীর ডান তীর পরিদর্শনে যাবেন। সফর শেষে দুপুর ১টায় তিনি রংপুরের উদ্দেশে যাত্রা করবেন।
এই সফরে উপদেষ্টার সঙ্গে রয়েছেন তাঁর একান্ত সচিব আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ মোবাশশেরুল ইসলাম এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য কর্মকর্তা দীপংকর বর।
কুড়িগ্রাম জেলার ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তা নদী সহ অন্যান্য নদীর পাড় দীর্ঘদিন ধরেই ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে রয়েছে। প্রতি বছর এই নদীগুলোর তীব্র ভাঙনে হাজারো পরিবার হারাচ্ছে তাদের বসতভিটা ও কৃষিজমি, নিঃস্ব হচ্ছে হাজার হাজার পরিবার। জেলার রাজারহাট, চিলমারী, উলিপুর, নাগেশ্বরী, বিশেষ করে রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার হুমকিতে রয়েছে।
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও কুড়িগ্রামের নদীশাসন, টেকসই বাঁধ নির্মাণ এবং নদীতীর সংরক্ষণের মতো মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী কোনো কার্যকর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে নদীভাঙ্গন রোধে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন পেলেও তার বাস্তবায়নে দেখা গেছে চরম উদাসীনতা ও অর্থ বরাদ্দের ঘাটতি।
জেলার অর্থনীতির সম্ভাবনাময় একটি অংশ হলো ভুরুঙ্গামারী সীমান্তের সোনাহাট স্থলবন্দর। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এই স্থলবন্দর, লক্ষ লক্ষ মানুষের চলাচল ও সীমান্ত সংলগ্ন বিজিবি ক্যাম্পগুলোতে যাতায়াতের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম সোনাহাট সেতু দুই বছরে নির্মাণ করার কথা থাকলেও ছয় কোন অদৃশ্য শক্তির ইশারায় ৬ বছরেও শেষ হচ্ছে না তা অজানা। সীমান্তে বিজিবি ক্যাম্পে যাতায়াতের জন্য একমাত্র সেতুর নির্মাণকাজ বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে, চলছে কচ্ছপ গতিতে। সেতুটি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি মিললেও ছয় বছরেও তা পূর্ণতা পায়নি, ফলে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং পণ্য পরিবহনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
দীর্ঘ রাজনৈতিক অব্যবস্থাপনার পর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের প্রত্যাশায় নতুন আশার আলো জাগিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে একজন বিশিষ্ট পরিবেশবাদী ও সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের কুড়িগ্রাম সফরকে অনেকেই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন।
এ সফর শুধু একটি আনুষ্ঠানিক পরিদর্শন নয়, বরং দীর্ঘদিনের অবহেলিত নদীভাঙ্গন ও অবকাঠামোগত সমস্যার সমাধানে বাস্তবসম্মত উদ্যোগ গ্রহণের একটি সম্ভাব্য সূচনা হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়—উপদেষ্টার এই সফর কি কুড়িগ্রামের দুর্গত মানুষের স্বপ্নপূরণের প্রথম ধাপ হয়ে উঠবে?
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোঃ মেছবাহুল আলম , বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: +৮৮ ০১৩০২১৭৫০৫৭
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত